রাজধানীর ভাটারা, হাজারীবাগ, চকবাজার ও কামরাঙ্গীরচর থেকে পৃথক ঘটনায় শিশুসহ পাঁচ জনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে চকবাজার থেকে ওয়ার্কশপ শ্রমিক মো. রাকিব(১৯) ও ফটোগ্রাফার সাজ্জাদ আলী নয়ন(২৪), কামরাঙ্গীরচর থেকে শিক্ষার্থী সারিকা হোসেন নাবিলা (১৩), ভাটারা থেকে রিকশাচালক ইউনুস আলী (৫৭), এবং হাজারীবাগ থেকে গৃহবধু রুপা আক্তার ও চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান জানান, নিহতের পরিবার ও তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলে জানা যায় নিহত রাকিব বিগত কয়েকদিন যাবত মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিল। প্রায় সময়ই সে আনমনা হয়ে চলাফেরা করতো। তার কি হয়েছে এ বিষয়ে পরিবারের কেউ জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো কিছুই উত্তর দিত না। গতরাতে মো. রাকিব নিজের ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে। পরে পরিবার স্বজনরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে আমাদের খবর দিলে আমরা রাকিবের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠাই। রাকিব একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন বলে পরিবারের স্বজনরা জানিয়েছে। অপরদিকে চকবাজার থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. কাউছার জানান, আমরা খবর পেয়ে হোসনি দালান রোডের ছয়তলা ভবনের একটি কক্ষ থেকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় ফটোগ্রাফার সাজ্জাদ আলী নয়ন(২৪) এর মরদেহ উদ্ধার করি। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠাই। প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি তিনি নাটক সিনেমা ফটোগ্রাফির কাজ করত। ঘটনাস্থলের অফিসটিতে তার ভিডিও এডিটিং এর কাজ করত। তবে, কী কারণে সে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে এ বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও জানান এসআই কাউছার। তিনি বংশাল এলাকায় পরিবারের সাথে থাকতেন বলে জানাগেছে।

অপর ঘটনায় হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ রুপা নিজের ঘরে ভিতর থেকে দরজা লক করে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে থাকে। পরে তার শাশুড়ি দেখতে পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান রুপার বেঁচে নেই। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি পারিবারিক কলহের জেরে এ ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। তবুও মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কামরাঙ্গীরচর থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) ইমরান হোসেন জানান, কামরাঙ্গীরচরের খালপাড় অটোস্ট্যান্ড এলাকার একটি বাসার দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় সারিকা হোসেন লাবিবার মরদেহ উদ্ধার করি। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠাই। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি সে একটি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। এখানে তার লেখাপড়া ভালো লাগতো না। এ কারণে তার বাবা তাকে রাগারাগি করে। পরে অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানতে পারি।

অপর ঘটনায় ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আসাদুজ্জামান জানান, আমরা খবর পেয়ে ভাটারার নূরের চারা এলাকার নাসির উদ্দিনের টিনশেডের বাসা থেকে রিকশাচালক ইউনুস আলীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করি। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
তিনি আরও জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই অনেক সিগারেট খেয়ে আশেপাশে ফেলে রেখেছে। তাঁর স্ত্রী বাসা বাড়িতে কাজ করে। প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি কোনো কারণে সে হতাশাগ্রস্ত ছিল। হয়তোবা এ কারণেই সে এ ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। নিহতের স্ত্রীও এ বিষয়ে কোন কিছু বলতে পারে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান এসআই আসাদুজ্জামান জানান।